মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন

android apple
signal

July 23, 2024 4:02 PM

printer

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাধারণ বাজেটে আয়কর কাঠামো পরিবর্তন করে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বা বিধিবদ্ধ ছাড়ের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাধারণ বাজেটে আয়কর কাঠামো পরিবর্তন করে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বা বিধিবদ্ধ ছাড়ের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন লোকসভায় নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন তৃতীয় এনডিএ সরকারের প্রথম বাজেট আজ পেশ করেছেন। প্রত্যক্ষ করের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন আয়কর কাঠামো তিন থেকে সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ, ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, ১০-১২ লক্ষ টাকা আয়ে ১৫ শতাংশ, ১২ – ১৫ লক্ষ টাকা আয়ে ২০ শতাংশ এবং ১৫ লক্ষ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। তিন লক্ষ টাকা আয়ে কোনো কর দিতে হবে না। নতুন কর কাঠামোয় আয়করদাতাদের সাড়ে ১৭ হাজার টাকা লাভ হবে বলে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন।

 স্টান্টার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর ফলে বেতনভোগ কর্মচারীদের আংশিক সুরাহা হবে। মূলধনী লাভে ওপর করের ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমাণ এক লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে সোয়া ২ লক্ষ টাকা।

বাজেটে ই-কমার্সের ওপরে টিডিএস বা উত্ষ মূলে করের পরিমাণ কমানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সময় মত টিডিএস না দেওয়া হলে সেটা আর অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

এই অর্থবছরে মুদ্রস্ফীতি চার শতাংশের মতই থাকবে বলে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। মোবাইল ফোন, চার্জার আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সোনা, রূপো ও  তামা ৬ শতাশ এবং প্ল্যাটিনামে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমছে। সবরকম বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টার্টআপ ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স বাতিল করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী এই বাজেটে ৯ টি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র ঘোষণা করেছেন। এগুলি হল কৃষি, কর্মসংস্থান, সবাইকে সামিল করে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়, ম্যানিফ্যাকচারিং ও পরিষেবা, শহর উন্নয়ন, তেজস শক্তি, উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সংস্কারের পরবর্তী পর্যায়।

ভারতের অর্থনৈতিক প্রসার উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী দাবি করেন।

এই বাজেটে রাজস্ব ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলার কথা বলা হয়েছে।

চলতি অর্থবর্ষে কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের জন্য ১ লক্ষ ৫২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী দু বছরে সরকার ১ কোটি কৃষককে প্রাকৃতিক চাষে উৎসাহ জোগাবে। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গবেষনার কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, ডাল ও তৈলবীজে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ হাজার চাহিদা ভিত্তিক জৈব সম্পদ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সরকার, দরিদ্র, মহিলা, যুব এবং কৃষকদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়ে শ্রীমতি সীতারামন বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানোয় ৮০ কোটির বেশী মানুষ উপকৃত হয়েছেন। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে ১শো৯ টি নতুন উচ্চ ফলনশীল এবং জলবায়ু অনুকূল শষ্য চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে। খরিফ শষের  জন্য ৪শোটি জেলায় ডিপিআইয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল সমীক্ষা চালানো হবে। ৬ কোটি কৃষকে এবং তাঁদের জমি সংক্রান্ত তথ্য ফার্মার অ্যান্ড ল্যান্ড রেজিস্ট্রির আওতায় আনা হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর নামক সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। এর আওতায় ১ কোটি বাড়িতে প্রতিমাসে ৩শো ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পৌঁছে দিতে রুফটপ সোলার প্যানেল লাগানো হবে। জনজাতি উন্নয়নে ৬৩ হাজার গ্রামকে বিশেষ অর্থ সহায়তা করা হবে।

বিহারে বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে শ্রীমতি সীতারামন জানিয়েছেন। কোশী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পের ওপর জোর দেওয়া হবে। বিহারে নতুন বিমানবন্দর ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। বিহারে ২১ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুত্ কারখানা গড়ে তোলা হবে। বক্সারে গঙ্গার ওপর নতুন ব্রিজ ও পাটনা-পূর্ণিয়া এবং বুদ্ধগয়া-বৈশালী এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হবে। অরুণাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও সিকিমে বন্যা নিয়ন্ত্রনেও দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ। পর্যটনের উন্নয়নের জন্য নালন্দার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এজন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ বরাদ্দ করা হবে। অন্ধ্রের পোলাভরম সেচ প্রকল্পের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। অন্ধ্রপ্রদেশের গ্রামোন্নয়নের জন্য ২ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজধানী অমরাবতীর উন্নয়নের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে মহিলা এবং বালিকাদের বিভিন্ন উন্নয়নী প্রকল্পের জন্য তিন লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন। মহিলারা জমি বাড়ি সম্পত্তি কিনলে স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়ে দেওয়া হবে।

কর্মরত মহিলাদের থাকার জন্য হস্টেল এবং তাদের শিশুদের জন্য ক্রেস তৈরির কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কর্মক্ষেত্রে আরও অধিক সংখ্যায় মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প।

কর্ম সংস্থানের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে অর্থমন্ত্রী ইপিএফ প্রকল্পে নতুন ঢোকা কর্মীদের জন্য এই ঘোষণা করেন। কর্ম সংস্থানের জন্য তিনটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ৫০০ শীর্ষস্থানীয় কোম্পানীকে এক কোটি যুবার ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দিতে একটি প্রকল্প আনা হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা এবং এককালীন ৬ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়া হবে। নতুন কাজে যোগ দেওয়া কর্মীদের একমাসের মজুরী দেওয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনটি কিস্তিতে ১৫ হাজার টাকা করে তাদের দেওয়া হবে।

কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শ্রীমতি সীতারামন বলেন, পরবর্তী ৫ বছরে চার কোটি ১০ লক্ষ যুবাদের কাজ দেওয়ার জন্য ২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আর্থিক ক্ষেত্রের উল্লেখ করে শ্রীমতি সীতারমন বলেন, দেউলিয়া বিধির আওতায় দ্রুত বিষয়গুলির নিষ্পত্তির জন্য একটি সুসংহত প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হবে। ঋণ আদায়ের কাজ ত্বরান্বিত করতে ডেট রিকভারি ট্রাইব্যুনালকে আরও জোরদার করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য ১১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূলধনী ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আমাদের মোট অভ্যন্তরীন উত্পাদন জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

 অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১০০ মেগাওয়াট বাণিজ্যিক তাপবিদ্যুত্ কারখানা গড়ে তোলার জন্য এনটিপিসি এবং ভেলের মধ্যে যৌত্র উদ্যোগ গড়ে তালো হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অতিরিক্ত তিন কোটি আবাস তৈরি করে দেওয়া হবে। শহরে আবাসন ক্ষেত্রে এক কোটি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে মাথা গোঁজার ঠাই করে দিতে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সাহায্য হবে ২ লক্ষ ১০ হাজার কোটি। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অধীনে চতুর্থ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। এর আওতায় সারা দেশে ২৫ হাজার গ্রাম উপকৃত হবে।

দেশের কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে।

 ভারতে জ্বালানি শক্তির চাহিদা ২০৪৭ সালের মধ্যে দুই থেকে আড়াই গুণঁ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করে শ্রীমতি সীতারমন বলেন, এই বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূলধনী বিনিয়োগ আরও প্রসারিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৯৭ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তিন লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে।

কলকাতা – অমৃতসর শিল্প করিডর গড়ে তোলা হবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অন্তর্বর্তী বাজেটে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, সেই মত দরিদ্র, মহিলা, যুবা এবং কৃষক এই চারটি ভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। ক্যান্সারের তিনটি ওষুধের জন্য আমদানি শুল্ক মকুব করা হয়েছে।  চর্মজাত দ্রব্য ও সোলার প্যানেলের দাম কমছে।

 

সবচেয়ে বেশি পঠিত

সব দেখুন