মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন

android apple
signal

January 25, 2025 10:02 PM

printer

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভারতীয় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং তাঁর সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মহিলারা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৭৬ তম সাধরণতন্ত্র দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় আজ জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণে বলেন, সাধরণতন্ত্র দিবস সমস্ত নাগরিকের সম্মিলিত আনন্দ এবং গর্বের বিষয়। গণ পরিষদে দীর্ঘ তিন বছরের আলোচনা ও বিতর্কের পর ১৯৪৯ সালে ২৬ শে নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি সেই সংবিধান বলবত্ হয়েছে। কোনো জাতির পক্ষে ৭৫ বছর খুব একটা বেশি সময় না হলেও, এই দিনই বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা বিভিন্ন দেশের মধ্যে তার নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছে বলে শ্রীমতি মুর্মু বলেন। ঔপনিবেশিক শাসনের বঞ্চনা ও দারিদ্রের অন্ধকার দূর করে ভারত আবার নিজেকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উত্স হিসাবে পরিচিত করতে পেরেছে। দেশকে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে যেসব বীর দেশপ্রেমিক আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের অনেকের সম্পর্কেই আমরা কম জানি। এবছর আমরা ভগবান বিরসা মুন্ডার দেড়শো তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন করছি বলে রাষ্ট্ররপতি উল্লেখ করেন।

জাতীয় ইতিহাসে ভগবান বিরসা মুন্ডার ভূমিকা সঠিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাবাসাহেব আম্বেদকারের মত মনীষীরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের ধারণাকে পুনরাবিস্কার করতে সাহায্য করেছে।

গণ পরিষদে দেশের সমস্ত অংশ ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সরোজিনী নাইডু, রাজকুমারী অমৃত কৌর, সুচেতা কৃপালিনী, হংসবেন মেহতা এবং মালতী চৌধুরী সহ ১৫ জন মহিলা সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে যখন মহিলা সাম্য অনেক দূরবর্তী ধারণা ছিল, সেখানে ভারতীয় মহিলারা দেশের ভবিষ্যত্ নির্ধারণে গুরুত্বরপূর্ণ অবদান যুগিয়েছে।

আমাদের সংবিধান ভারতীয় হিসাবে সম্মিলিত পরিচিতি সত্ত্বার চূড়ান্ত ভিত্তি। এই সংবিধানই আমাদের প্রগতির পথে দিশা দেখিয়েছে। খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ডক্টর আম্বেদকারের প্রতি বিনম্র চিত্তে কৃতজ্ঞতা স্মরণ করি।

সংবিধানের এই ৭৫ বছর এক নবীন রিপাবলিকের সর্বাঙ্গীন অগ্রগতির পরিচায়ক। স্বাধীনতার সময় এবং তার পরেও দেশ অপরিসীম দারিদ্র এবং ক্ষুধার মোকাবিলা করেছে। কৃষকদের নিরন্তর কঠোর পরিশ্রমে খাদ্য উত্পাদনে আমরা স্বয়ম্ভর হয়েছি বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। পরিকাঠামো এবং শিল্প উত্পাদন ক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটেছে শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রমে। এখন ভারতের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির ওপর যথেষ্ট প্রভব বিস্তার করতে সক্ষম। সংবিধান নির্দেশিত দিশা ছাড়া এই রূপান্তর সম্ভব হত না।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিকাশ হার উঁচুর দিকেই রয়েছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কৃষক এবং শ্রমিকদের হাতে আরও অর্থ আসছে। আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র সীমার বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।

প্রধনমন্ত্রী জন ধন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা, সুরক্ষা বিমা যোজনা, মুদ্রা, স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিয়া এবং অটল পেনশন যোজনার মত উদ্যোগের ফলে সবাইকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সামিল করা সম্ভব হচ্ছে। জন কল্যাণের ধারণার সংজ্ঞা পাল্টে আবাসন ও পানীয় জলের মত জীবনধারণের মূল প্রয়োজনগুলির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সমাজের প্রান্তিক শ্রেণী বিশেষ করে এস সি-এসটি, ওবিসিদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুসূচীত জাতি অভ্যুদয় যোজনা তপশিলি জাতিদের মধ্যে থেকে দারিদ্র দূর করার কাজে সাহায্য করছে। উপজাতি সম্প্রদায় মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ধরতি আবা জন জাতীয় গ্রাম উত্কর্ষ অভিযান ও প্রধানমন্ত্রী জনজাতী আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান কাজ করে চলেছে। সড়ক, রেল, বন্দর সহ পরিকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

শ্রীমতি মুর্মু আরও বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, তা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ডিজিটাল পেমেন্ট এবং প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর ব্যবস্থা বহু মানুষকে এই অর্থব্যবস্থার আওতায় নিয়ে এসেছে।

দেউলিয়া বিধির মত একগুচ্ছ সাহসী ব্যবস্থার ফলে তপশিলিভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির অনুত্পাদক সম্পদের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। ১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীন হলেও ঔপনিবেশিক ধ্যান ধারণার বহু অবশেষ আমাদের মানসিকতা রয়ে গেছে। এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সম্মিলিতভাবে প্রয়াস চালানো হচ্ছে। পুরনো ফৌজদারি আইনের পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং সাক্ষ্য অধিনিয়ম আনা হয়েছে। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার কেন্দ্র এখন শাস্তির পরিবর্তে ন্যায়ের ধরাণাটাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, চলতি মহাকুম্ভে ভারতীয় ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির প্রকাশ দেখা গেছে। মহান ভাষাগত বৈচিত্র্যের এই দেশে সমৃদ্ধি ভাষা সংরক্ষণের জন্য সরকার অহমিয়া, বাংলা, মারাঠী, পালি এবং প্রাকৃতকে ধ্রুবদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ১১ টি ধ্রুবদী ভাষা রয়েছে।  

দেশের নবীন প্রজন্মই ভবিষ্যত্ ভারত গড়ে তুলবে। শিক্ষা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার সেজন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে লগ্নীর পরিমাণ বাড়িয়েছে। গত দশকে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির ফলে শিক্ষা

পরিকাঠামো এবং শিক্ষণের গুণগত মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে আঞ্চলিক ভাষাগুলিকেও তুলে ধরা হচ্ছে। এর ফলে পড়ুয়াদের সাফল্যেও অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। গত এক দশকে শিক্ষকদের ৬০ শতাংশই মহিলা।

বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং দক্ষতা বিকাশের ফলে নবীন শিক্ষার্থীদের কর্পোরেট সেক্টরে কাজের সুযোগ বেড়েছে। স্কুল শিক্ষার ভিত আরও মজবুত হওয়ায় জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বে মেধা সত্ত্বেও অধিকারের ক্ষেত্রে ভারতের স্থান ষষ্ঠ। বিশ্ব উদ্ভাবনী সূচকেও ভারত ২০২০-র ৪৮ তম স্থান থেকে ৩৯ তম স্থানে উঠে এসেছে।

জাতীয় কোয়ান্টাম মিশন প্রযুক্তির নতুন নতুন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ইকো সিস্টেম তৈরির চেষ্টা করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, রোবট বিজ্ঞান এবং সাইবার সুরক্ষার মত উন্নত প্রযুক্তি ক্ষেত্রের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তা ভবিষ্যতের ভাবনা মনে হলেও এখন তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

শ্রীমতি মুর্মু আরও বলেন, সাম্প্রতিককালে ইসরো মহাকাশ গবেষণায় বিশাল সাফল্য পেয়েছে। এইমাসেই সফল স্পেস ডকিং পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এই সংস্থা দেশকে আবার গর্বিত করেছে।

গত বছর অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক গেমসে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সাফল্যের উল্লেখ করে শ্রীমতি মুর্মু বলেন, এপর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় এই দুটি গেমসে পাঠানো হয়েছিল। এযাবত্ সেরা সাফল্য সেখান থেকে এসেছে। ফিডে দাবা অলিম্পিয়াডে আমাদের খেলোয়াড়দের সাফল্য এবং ডি মুকেশের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হওয়ার কথাও রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।

ভারতের সংস্কৃতি এবং সভ্যতায় প্রবাসী ভারতীয়দের অবদানের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তাদের সাফল্য আমাদের গর্বিত করেছে। তাদের যোগদানের ফলে ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত নিশ্চিতভাবেই গড়ে উঠবে।

শ্রীমতি মুর্মু নবীন-যুবা বিশেষ করে মেয়েদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতা এবং সাধারণতন্ত্র দিবসের শতবার্ষিকীতে দেশবাসী যখন উত্সব পালন করবে, তখন আজকের শিশুরা জাতীয় পাতাকা অভিবাদন করে পরবর্তী প্রজন্মকে একথাই বলবে যে, আমাদের অতুলনীয় সংবিধানের দিশা নির্দেশ ছাড়া এ কখনই সম্ভব হত না।

মহাত্মা গান্ধীর বাণী উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম স্বাধীন ভারতের লক্ষ্যের কথা অবশ্যই মনে রাখবে। গান্ধীজীর স্বপ্নের ভারতের রূপকে সাকার করতে রাষ্ট্রপতি আমাদের পুনরায় অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। অধিকার এবং দায়িত্ব একই মুদ্রার দুই দিক, জাতির জনকের এই বাণী উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আমাদের মনে করিয়ে দেন, অধিকারের প্রকৃত উত্স হল কর্তব্য পালন।

সবচেয়ে বেশি পঠিত

সব দেখুন