প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মনমোহন সিং-এর শেষকৃত্ত্য হবে আজ। অন্তিম যাত্রা শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯’টায় নতুন দিল্লিতে কংগ্রেস সদর দপ্তর থেকে। আকাশবাণীর দিল্লি কেন্দ্র অন্তিম যাত্রার ধারা বিবরণী সম্প্রচার করবে সকাল ১১-টা থেকে। এই ধারাবিবরণী এফ এম রেণবো, ইন্দ্রপ্রস্ত, আকাশবাণী লাইভ নিউজ ২৪ ইন্টু সেভন চ্যানেল ছাড়াও সমস্ত আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে রিলে করে শোনানো হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর স্মারকের জন্য সরকার একটি স্হান নির্বাচিত করেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে গতকাল এই মর্মে যে অনুরোধ সরকারের কাছে রেখেছিলেন,তার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাও এই সিদ্ধান্তে সহমত পোষণ করেছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, শ্রী খার্গে এবং ডক্টর সিং-এর পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন, আজ সকালে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কংগ্রেস দপ্তরে। সেখানে দলীয় কর্মী এবং জনগণ তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন। তারপর শুরু হবে শোক যাত্রা। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্ত্য সম্পন্ন হবে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। বাতিল করা হয়েছে সমস্ত সরকারি কর্মসূচী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত শোক প্রস্তাবে ডক্টর সিং-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয়েছে, দেশ একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রনেতা, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট এক নেতাকে হারালো। জাতীয় জীবনে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। মনমোহন সিং-এর স্মৃতিতে বৈঠকে দু-মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
আগেই জানানো হয়েছে, ৯২ বছর বয়সে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মনমোহন সিং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সাইন্সসেসে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন তিনি বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। বাড়িতেই তিনি সংজ্ঞা হারান। রাত আটটা নাগাদ এইমস-এর জরুরী বিভাগে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রাত ন’টা ৫১ মিনিট নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ভারতের সংস্কারমুখী অর্থনীতির জনক মনমোহন সিং দেশের অর্থনীতির আন্তর্জাতিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। পি ভি নরসীমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় তিনি অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ এই ১০ বছর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডক্টর মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শেষ ভাষনে শ্রী সিং, জনগনকেই সরকারের মূল স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করেন।
১৯৩২ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার গাহতে ডঃ মনমোহন সিংয়ের জন্ম। পিতা গুরুমুখ সিং এবং মা অমৃত কৌর। দেশ ভাগের পরই তাঁরা সপরিবারে অমৃতসর চলে আসেন।
আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এসেছে শোকবার্তা। মার্কিন বিদেশ সচিব অযান্টনি ব্লিঙ্কেন,মনমোহন সিংকে ভারত মার্কিন সম্পর্কের মুখ্য স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা দ্য সিলভা, IBSA ডায়ালগ ফোরাম এবং বিকস গোষ্ঠীতে মনমোহন সিং এর অবদানের কথা স্মরণ করেন।
আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কার্জাই সমাজ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন আফগানিস্তানের মানুষ তাদের এক প্রিয় বন্ধুকে হারালো।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি ডঃ সিং এর প্রয়াণে গভীর শোক ব্যক্ত করে তাঁকে এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দুই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র এবং বন্ধুত্ব রক্ষায় তাঁর সহযোগিতা নেপাল চিরকাল মনে রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী নবীন রাম গুলাম সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, ডঃ মনমোহন সিং ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র রাজনীতিক এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তাঁর হাত ধরেই ভারতের অর্থনৈতিক মানচিত্রে রূপান্তর ঘটে।
মালদ্বীপের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ নাসির গভীর শোক ব্যক্ত করে এক্স হ্যান্ডেলে ডক্টর সিং-কে মালদ্বীপের বিশ্বস্ত বন্ধু বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল সব সময় ছিল মধুর।
ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভ ভারত ও রাশিয়া সম্পর্ক শক্তিশালী করতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কথা উল্লেখ করেন। একজন বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন ডঃ মনমোহন সিং অর্থনীতিতে ভারতের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেছিলেন।