প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহাকুম্ভ উপলক্ষে সমাজে বিভেদ আর বিদ্বেষের ভাবনাকে নষ্ট করার সঙ্কল্প নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আজ আকাশবাণীর মন কি বাত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের এই দৃশ্য বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। এবারের মহাকুম্ভ ঐক্যের মহাকুম্ভের মন্ত্রকে শক্তিশালী করে তুলবে। উল্লেখ্য, আগামী মাসের ১৩ তারিখ থেকে প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, এবারে মহাকুম্ভে সরকার অনুমোদিত ট্যুর প্যাকেজের খোঁজ মোবাইলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মন কি বাতে শ্রী মোদি বলেন, ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস থেকে বর্ষব্যাপী সংবিধানের ৭৫-তম বার্ষিকী পালন শুরু হয়েছে। দেশের নাগরিকদের সংবিধানের ঐতিহ্যর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনা আলাদা আলাদা ভাষায় পাঠ করে constitution75.com এই ওয়েবসাইটে আপলোড করা যাবে। তিনি মন কি বাতের শ্রোতাদের, স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের কাছে অনুরোধ করেন, তারা যেন অতি অবশ্যই এই ওয়েবসাইটে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এদিন মন কি বাতে দেশে অ্যানিমেশন সিরিজের জনপ্রিয়তার দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। তিনি বলেন, ‘KTB- ভারত হ্যায় হাম’ নামে একটি অ্যানিমেশন সিরিজের দ্বিতীয় সিজিন শুরু হয়েছে। এই সিরিজে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেইসব নায়ক নায়িকাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যাদের নিয়ে তেমনভাবে আলোচনা হয়না। দূরদর্শনের পাশাপাশি অন্য OTT প্ল্যাটফর্মেও এটি দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী ‘মন কি বাত’-এ চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবছর যাঁদের শতবর্ষ পালিত হচ্ছে, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন ।
নক্সালপন্থী অধ্যুষিত বস্তার জেলার খেলাধূলাকে কেন্দ্র করে নতুন উত্সাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে মাওবাদী হিংসায় জড়িত অনেকেই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। মন কি বাতে প্রধানমন্ত্রী বস্তার অলিম্পিকের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন। বস্তার অলিম্পিকের প্রতীক হল ‘বুনো মহিষ এবং পাহাড়ী ময়না’। এর প্রতীকগুলির মধ্যে বস্তার অঞ্চলের সংস্কৃতির ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। এই অলিম্পিক মহাকুম্ভের মূল মন্ত্রটি হল ‘খেলবে বস্তার জিতবে বস্তার’। প্রথমবার আয়োজিত বস্তার অলিম্পিকে ৭টি জেলার প্রায় এক লক্ষ ৬৫ হাজার খেলোয়াড় অংশগ্রহন করেছেন। অ্যাথলেটিক, তীরন্দাজ, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, হকি, ভারত্তোলন, ক্যারাটে, কাবাডি, খো খো এবং ভলিবল প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুবারা তাঁদের প্রতিভার পরিচয় রেখেছে।
মন কি বাত-এ প্রধানমন্ত্রী এদিন ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই-এ দেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময়’ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া ছিল অন্যতম। একমাস থেকে পাঁচ বছর বয়স অবদি বাচ্চাদের প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়ার স্থান ছিল- তিনে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ও তার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। অসমের জোরহাটের চা-বাগনগুলিতে চার বছর আগেও ম্যালেরিয়া একটি দুশ্চিন্তার কারণছিল। কিন্তু সবাই একজোট হয়ে সমস্যার মোকাবিলা করায় অনেকটাই সাফল্য এসেছে।
শ্রী মোদী এদিন ক্যানসার চিকিৎসায় অগ্রগতির কথাও, মন কি বাত-এ তুলে ধরেছেন। বিশ্ববিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এর গবেষণা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ক্যানসার রোগীর সময়মতো চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প বড় ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রকল্পের কারণে ৯০ শতাংশ ক্যানসার রোগী সময়মতো চিকিৎসা শুরু করতে পেরেছেন। আগে অর্থের অভাবে দরিদ্র রোগীরা ক্যানসার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা থেকে সরে দাঁড়াতেন, কিন্তু ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প, অর্থের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
ওড়িশার কালাহান্ডি অঞ্চলে অপরিসীম দারিদ্র থেকে উঠে আসার জন্য স্থানীয় কৃষকদের প্রচেষ্টার কথা এদিন মন কি বাত-এ উঠে এসেছে। কালাহান্ডির গোলমুন্ডা ব্লকের কৃষকরা ছোট ছোট গোষ্ঠী শুরু করেন। এই গোষ্ঠীর সকলে মিলে FPO বা কৃষক সংঘ শুরু করেছেন। এই FPO-র বার্ষিক টার্ন ওভার দেড় কোটি টাকার’ও বেশী। সেখানকার কৃষকরা আলু আর পেঁয়াজ চাষ করার নতুন কলাকৌশল’ও শিখছে।
শ্রী মোদী এদিন বলেন, মন কি বাত দেশের সামগ্রিক শক্তির জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে। তিনি আসন্ন নতুন বছরে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসাহব্যাঞ্জক প্রচেষ্টাগুলো আরো বেশী করে ভাগ করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।