রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রবীণ CPIM নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। আজ সকাল ৮’টা ২০ মিনিট নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউতে নিজের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। দরিদ্র, শোষিত মানুষের পাশে তিনি ছিলেন অতন্দ্রপ্রহরী।
তাঁর মরদেহ আজ বেলা সাড়ে ১২-টা পর্যন্ত বাড়িতেই রাখা থাকবে। দলীয় কর্মী সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। মরদেহ আজ সংরক্ষিত থাকবে বলে দলের সি পি আই এম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন।
১৯৪৪ সালের পয়লা মার্চ উত্তর কলকাতায় তাঁর জন্ম। কবি সুকান্ত ভট্টাচারার্যের ভাইপো বুদ্ধদেববাবুর স্কুল শিক্ষা শুরু হয় শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা অনার্স নিয়ে স্নাতক হন । দমদমের আদর্শ শঙ্খ বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন।
১৯৬৬-তে সি পি আই এম-এর প্রাথমিক সদস্য পদ নিয়ে খাদ্য আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দলের যুব শাখা, DYFI-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে প্রথম তিনি কাশ্মীপুর – বেলগাছিয়া কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। প্রথম বাম মন্ত্রিসভায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। ৮২-র বিধানসভা নির্বাচনে খুব কম ব্যবধানে ওই কেন্দ্র থেকেই পরাজিত হলেও ৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে জিতে পুনরায় বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি এই কেন্দ্রেরই বিধায়ক ছিলেন। ৮৭-তেই তিনি আবারও তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্বভার পালনের সঙ্গে সঙ্গে নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক দফতরেরও দায়িত্ব সামলেছেন।
১৯৯৩-এ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তবে, কয়েক মাস পরেই তিনি আবারও মন্ত্রিসভায় যোগ দেন।
১৯৯৯-এ উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপরই ২ হাজার সালের ৬-ই নভেম্বর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু-র স্হলাভিষিক্ত হন তিনি। ২০০২-এ সি পি আই এম-এর পলিটব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬-এ বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪-টি আসনের মধ্যে ২৩৫-টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে সি পি আই এম।
দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে আসিন হওয়ার পরই রাজ্যে শিল্পন্নয়নে জোর দেন তিনি। এই সময়ই সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি কারখানা তৈরির প্রস্তাব আসে। এই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে শুরু হয় বিরোধী আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত টাটা গোষ্ঠী সিঙ্গুর থেকে সরে যায়।
নন্দীগ্রামেও কেমিকেল হাব গড়ার প্রস্তাবও বাধাপ্রাপ্ত হয় বিরোধীদের বিক্ষোভ আন্দোলনে। ২০১১ সালে তার নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়। ২০১১-র ১৩-ই মে বুদ্ধদেববাবু মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে গভীর শোক ব্যক্ত করেছেন। আজ তাঁর বাসভবনে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রী ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রা নিয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সরকার তাই মেনে নেবে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুত্যুতে আজ সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।