আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তারি পড়ুয়ার নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন আরো তীব্র হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে ‘ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ আজ দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। হাসপাতালগুলিতে একাধিক পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তবে, জরুরী পরিষেবা চালু থাকবে।
‘রেসিডেন্ট ডক্টর্স অফ ওয়েস্টবেঙ্গল’ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ৬’দফা দাবীর কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফাস্ট ট্র্যাক বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, স্বচ্ছ্ব তদন্ত, প্রিন্সিপাল সহ সব দায়িত্বপূর্ণ আধিকারিকদের পদত্যাগ, কলকাতা পুলিশ প্রতিবাদী ছাত্রদের ওপর যে ঘৃণ্য অত্যাচার চালিয়েছে, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, নিহত ডাক্তারির পড়ুয়া ছাত্রীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও কর্মক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। তাদের দাবী পূরণ না হ ওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামে’র পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে লেখা এক চিঠিতে PGT তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রকৃত সত্য প্রকাশের জন্য পাঁচ দফা দাবী জানিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- ঘটনার সত্য উদ্ঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটিকে, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের সম্পর্কে ৭২ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডাক্তার সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড অথবা হাসপাতাল থেকে সরাতে হবে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও সি সি টি ভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনতে হবে। ঘটনায় যারা যুক্ত, তাদের ‘মৃত্যুদন্ড’ ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকালও কর্মবিরতি পালন করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে আজ PSU /RYF /NBMS-এর মতো কিছু সংগঠন আজ বিকেল চারটেয় আর জি করের হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সভার আয়োজন করেছে।
অবিলম্বে আর জি কর কর্তৃপক্ষের পদত্যাগের দাবীতে আজ বিকেলে নাগরিক মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আগেই জানানো হয়েছে, কর্তব্যরত অবস্হায় তরুণী পড়ুয়া ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে এবং নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন আরও তীব্র করেছেন কলকাতার RG KAR মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়ার ডাক্তাররা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রশাসন তাদের দাবি না মানলে হাসপাতালের জরুরী এবং সাধারণ পরিষেবা বন্ধ থাকবে। ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত, ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ, পোস্টমর্টেমের রিপোর্টের বিশদ ও তদন্তের গতি প্রকৃতি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের জানানো সহ তাঁদের চার দফা দাবির কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তাঁরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল বিকেলে আর জি কর হাসপাতালে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা সহ পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে পর পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল সাংবাদিকদের জানান, কলকাতা পুলিশ স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছে। তদন্তে সন্তুষ্ট আন্দোলনকারীরা। পড়ুয়াদের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি আন্দোলনকারীদের কারও ওপর সন্দেহ থাকে, তাহলে তাদের জানানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, অনেক ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তাতে কান না দেওয়ারও জন্য তিনি আবেদন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, মুরলীধর শর্মা গতকাল নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মার সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি জানান, তদন্তের অগ্রগতি এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের তথ্য সম্পর্কে পরিবারকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা দুই চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষীকে কর্তব্যে অবহেলার দায়ে সাসপেন্ড করেছেন কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, আর জি কর সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্ম বিরতি চলায় সমস্ত মেডিকেল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যারা ছুটিতে আছেন, অবিলম্বে তাদের কাজে যোগ দিতে বলেছে স্বাস্হ্য ভবন।
প্রতিবাদ বিক্ষোভের মধ্যেই আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় বশিষ্টকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় এম এস ভি পি হয়েছেন ডিন বুলবুল মুখোপাধ্যায়। রাজ্যের স্বাস্হ্য শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক জানিয়েছেন, ডাক্তার বশিষ্টকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।